
মূল গল্প : দ্য ওয়েপন
মূল রচনা : ফ্রেডরিক ব্রাউন
সবে সন্ধ্যা নেমেছে। এ ঘরের আলোগুলো এখনও সবকটা জ্বালানো হয়নি। নিথর নিস্তব্ধ গোটা ঘরটাই আলো আঁধারিতে ঢাকা। স্পেশাল প্রজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী ডক্টর জয়ন্ত গডবোলে বসার ঘরে তাঁর প্রিয় আরাম কেদারাতে শরীর এলিয়ে বসে আছেন। চোখদুটো আধবোজা। ভাবনায় ডুবে আছেন তিনি। চারপাশের নিস্তব্ধতা এখন এতটাই গাঢ় যে পাশের ঘরে তাঁর ছেলের ছবির বইয়ের পাতায় পাতা ওল্টানোর সামান্য শব্দটুকুও তিনি এ ঘরে বসে শুনতে পাচ্ছেন।
সাধারণত সারাদিনের ব্যস্ততা আর পরিশ্রমের পরে নিজের বাড়িতে এই রকম কোনও এক আধো অন্ধকার ঘরে, ঠিক এই রকম ভাবে একাকী বসে থাকার সময়ে জয়ন্ত গডবোলে তাঁর যেটা প্রিয়তম কাজ—তাঁর সৃজনশীল কাজকর্ম নিয়ে চিন্তাভাবনা—সেটাই তিনি করে থাকেন। কিন্তু আজ পরিস্থিতি আলাদা। আজ তাঁর মন কোনও কিছুই ঠিক করে গুছিয়ে ভাবতে পারছে না। সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে যে কোনও সাধারণ মানুষ পর্যন্ত উত্তেজনায় ছটফট করে।
কিন্তু এখন তিনি তাঁর প্রজেক্ট বা সাফল্য নিয়ে কিছু ভাবছেন না। এই মূহূর্তে তাঁর ভাবনার বেশিরভাগ জুড়ে শুধুই তাঁর মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে—জন্মেই মাতৃহারা একমাত্র সন্তান—যে এই মূহুর্তে পাশের ঘরে একাকী খেলছে তাঁর ছবির বই-টই নিয়ে। ছেলেকে নিয়ে ভাবতে, ছেলের হাঁটা, চলা, তাকানো, হাসি সব কিছু নিয়েই ভাবতে তাঁর ভালো লাগে। তিনি আনন্দ পান। এই সব নিয়ে যখন তিনি ভাবেন তখন তাঁর ভেতরের যাবতীয় কষ্ট, তিক্ততা, যন্ত্রণা, সব সাময়িক ভাবে দূর হয়ে যায়। তিনি সম্পূর্ণ ভুলে যান সেই দিনটার কথা। যেদিন প্রথম বার তিনি তাঁর একমাত্র সন্তানের প্রতিকারহীন এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতে পেরেছিলেন। রোগ? না, তিনি আজ আর এটাকে রোগ বলে মানেন না। ছেলে তো এখন তাঁর মহানন্দেই আছে, খাচ্ছে-দাচ্ছে , খেলছে, তিনিও তাই সুখেই আছেন; এই রকম থাকাটাই তো আসল কথা। তাই না? ক’জন বাবা এমন শিশুর পিতা হতে পেরেছে যাদের সন্তান চিরকালই শিশু হয়ে থেকে যাবে, কখনও বড় হবে না, অন্তত এতটা বড় কখনোই হবে না যাতে তাকে তাদের ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে হয়?
তিনি ভালো করেই জানেন এগুলো আর কিছু না। শুধু নানান যুক্তি সাজিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া। কিন্তু এই সান্ত্বনা পাওয়ার মধ্যে খুব একটা ভুল কোথায়? যেখানে—
চিন্তাসূত্র ছিন্ন হয়ে গেল। দরজার বেল-টা বেজে উঠেছে। কেউ বোধহয় এসেছে।
ব্যস্ত শহরের হৈ-হট্টগোল থেকে দূরে একটু একটেরে এই সবুজে ঢাকা জায়গাটা। ডিআরডিওর লোকজন ছাড়া এখানে যেমন কেউ থাকে না, তেমনি কঠিন নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকায় বাইরের লোকজন চট করে কেউ আসেও না তেমন।
জয়ন্ত গডবোলে উঠে পড়লেন। হলঘর পেরিয়ে এগিয়ে গেলেন বাইরের দরজার দিকে। যাওয়ার আগে প্রায় অন্ধকারের মধ্যে ডুবে থাকা ঘরটার আলোগুলো সব জ্বেলে দিলেন। চিন্তা ভাবনায় বাধা পড়লে সাধারণত তিনি রেগে ওঠেন। আজ কেন যেন তিনি একটুও বিরক্ত হলেন না। সম্ভবত আজ রাতে, এই মূহুর্তে, যে কোনও ধরনের বাধাই তাঁর কাছে স্বাগত, সব বাধাই তিনি সাদরে অভ্যর্থনা করতে তৈরি।
দরজার পাল্লা খুলে দিলেন তিনি। সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন অপরিচিত মানুষ; আগন্তুক নিশ্চিত হতে চাইলেন, “ড. গডবোলে?” তারপর উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে উঠলেন, “আমি আদিনাথ। আদিনাথ দাস; আপনার সঙ্গে একটু কথা বলার ছিল। ভেতরে বসতে পারি?”
জয়ন্ত গডবোলে তাকিয়ে রইলেন আগন্তুকের দিকে। না, আগে কখনও দেখেননি এই মানুষটাকে। মানুষটা ছোটখাটো, বিশেষ কোনও বৈশিষ্ট্যহীন, তবে নিরীহ একজন সাদাসিধে লোক বলেই মনে হচ্ছে—নিশ্চিত কোনও সাংবাদিক কিংবা বীমা কোম্পানির দালাল।
তবে লোকটা কী করেন না করেন তাতে তাঁর কিছু এসে যায় না। নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে এসেছে যখন ভয়ের তেমন কিছু নেই। তাই তেমন কিছু চিন্তাভাবনা করার আগেই জয়ন্ত গডবোলে দেখলেন তিনি তাকে ভেতরে আসার জন্যে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেলেছেন, “নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, আসুন, আদিনাথ বাবু। ভেতরে আসুন।”
কাজটা ঠিক হল কিনা বুঝতে পারছেন না ড. গডবোলে । তাই নিজেকে বোঝালেন যে কয়েক মিনিট কথাবার্তা বললে এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। বরং মাথার মধ্যে চেপে বসা চিন্তার ভার কিছুটা হালকা হলেও হতে পারে। তাতে তাঁর মনের ভার কিছুটা হলেও লাঘব হতে পারে।
বসার ঘরে নিয়ে এলেন আগন্তুককে। “বসুন, কিছু চা বা কফি চলতে পারে?”
আদিনাথ বাধা দিলেন, “না, না, ধন্যবাদ।”
তিনি গিয়ে বসলেন একটা চেয়ারে; ড. গডবোলে বসলেন তাঁর সামনের সোফাটায়।
ছোটোখাটো মানুষটা দু হাতের আঙ্গুলগুলো একসঙ্গে জড়ো করে বসে আছেন। যদিও চোখে মুখে সংকোচের কোনও জড়তা নেই। উল্টে এক মুখ হাসি নিয়ে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে এলেন।
তারপর বললেন, “ড. গডবোলে, আপনি জানেন কি না জানি না, কিন্তু আপনিই হচ্ছেন সেই মানুষ যার গবেষণা সফল হলে সেটা হবে মানব জাতির ভবিষ্যতের জন্য অতীব ভয়ঙ্কর। এটা ঠিক যে আরও অনেকেই এমন গবেষণা করছেন। কিন্তু আপনি অনেক দূর এগিয়ে এসেছেন। আপনার গবেষণা অন্য আর কারোর চেয়ে অনেক আগেই মানব জাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা শেষ করে দিতে পারে।”
পাক্কা একটা ধান্দাবাজ লোক! ড. জয়ন্ত গডবোলে চিন্তিত হলেন। কিন্তু এটাও বুঝতে পারছেন অনেক দেরি করে ফেলেছেন তিনি। ঘরে ঢুকতে দেওয়ার আগেই লোকটা কী বিষয়ে কথা বলতে চায় সেটা তাঁর জেনে নেওয়া উচিত ছিল। এই আলোচনা এখন অস্বস্তিকর হয়ে উঠবে। রূঢ় হতে তিনি চান না, কিন্তু সেটাই এখন কাজের হবে বলে মনে হচ্ছে।
“ডা. গডবোলে, যে মারণাস্ত্র নিয়ে আপনি কাজ করছেন—”
অতিথিকে থামতে হল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেলেন শোওয়ার ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসছে বছর পনেরোর একটা ছেলে।
ছেলেটা আদিনাথ দাস নামের মানুষটাকে খেয়াল-ও করল না। সে সোজা দৌড়ে এসে ড. গাঙ্গুলির কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
“বাবা, তুমি কি এখন আমাকে গল্প শোনাবে?” হাসছিল ছেলেটা। জটিলতাহীন অপার্থিব সরল হাসি। পনের বছরের ছেলেটার মুখের হাসিটা ঠিক যেন চার বছরের বাচ্চার মতো মিষ্টি মনে হচ্ছিল।
ড. গডবোলে হাত বাড়িয়ে ছেলেকে টেনে নিলেন নিজের কাছে। তাঁর নজর কিন্তু রইল অতিথির দিকে। বোঝার চেষ্টা করছেন লোকটার প্রতিক্রিয়া। সে তাঁর ছেলের সম্পর্কে কতটা কী জানে সেটাও আন্দাজ করে নিতে চাইছেন তিনি। দেখলেন আদিনাথের মুখের ভাবে কোথাও কোনও বিস্ময়ের চিহ্ন নেই। ড. গডবোলে বুঝে গেলেন লোকটা জানে।
“অভি”— গডবোলের গলা থেকে স্নেহ ঝরে পড়ছে —“বাবা এখন একটু ব্যস্ত আছে। এই আর কিছুক্ষণ শুধু। তুমি এখন তোমার ঘরে যাও; আমি এক্ষুনি আসছি। তারপর তোমাকে গল্প পড়ে শোনাবো।”
“বেতালের গল্প তো? তুমি আমাকে বেতাল আর বিক্রমাদিত্যের গল্প পড়ে শোনাবে তো?”
“তুমি যেটা বলবে। এখন যাও তুমি। আচ্ছা, একটু দাঁড়াও। অভি, ইনি হচ্ছেন আদিনাথ দাস, আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।”
ছেলেটি মুখে কিছু বলে না। অতিথির দিকে তাকিয়ে শুধু লাজুকভাবে হাসে। আদিনাথ হাত বাড়িয়ে অভির হাতটা ধরে নিলেন। হাসি মুখে বললেন, “হাই, অভি।”
ড. গডবোলে সবটাই দেখলেন। এবার এতক্ষণে তিনি নিশ্চিত ছেলের এই হাসি আর এই হাবভাবের কারণ যে তাঁর মানসিক বয়স, শারীরিক নয় সেটা আদিনাথ আগে থেকেই জানেন।
অভি তখনও আদিনাথের হাতটা ধরে রেখেছে। এক মুহুর্তের জন্যে তো মনে হয়েছিল যে সে বোধহয় আদিনাথের কোলেই চেপে পড়বে। ড. গডবোলে আলতো করে তাকে কাছে টেনে নিলেন। বললেন, “অভি, তুমি এবার তোমার ঘরে যাও।”
ছেলেটা তার শোবার ঘরে ফিরে গেল ঠিকই কিন্তু এবার দরজাটা আর বন্ধ করল না।
জয়ন্ত গডবোলের চোখের দিকে তাকিয়ে আদিনাথ বললেন, “খুব মিষ্টি ছেলে। আমার তো ওকে আরও আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে।” অত্যন্ত আন্তরিক ভাবেই বললেন কথাটা। তারপর আবার বললেন, “আশা করি আপনি যে-গল্প গুলো ওকে পড়ে শোনাচ্ছেন সেগুলো যে সবই চিরন্তন সত্য সেটাও ওকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।”
ড. গডবোলে ধরতেই পারলেন না লোকটা কী বলতে চাইছে। তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তাঁর দিকে। আদিনাথ বললেন, “বেতাল আর বিক্রমাদিত্য গল্পগুলো, মানে বলতে চাইছি, গল্পগুলো তো দারুণ—কিন্তু এটা জানেন তো যে ঘাড়ের উপর বেতাল চেপে থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছনো আর হয়ে ওঠে না!”
ড. গডবোলে বুঝতে পারছিলেন না কেন একটু আগে হঠাৎই তিনি এই আদিনাথ নামের অপরিচিত লোকটাকে পছন্দ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। এই মাত্র সেটা তিনি বুঝতে পারলেন। তাঁর ছেলের প্রতি লোকটার সহানুভূতি তাকে নরম করে দিয়েছিল। এখন লোকটার কথা শুনে তাঁর আবার মনে হচ্ছে যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আলাপ পর্ব তাকে শেষ করতে হবে। তিনি এবার হঠাৎ করেই উঠে পড়লেন। তাঁর শরীরের ভাষায় এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তিনি লোকটাকে এবার চলে যেতে বলছেন।
মুখেও বললেন, “আদিনাথ বাবু, আমার মনে হচ্ছে আপনি আমার আর আপনার নিজের, দুজনেরই সময় নষ্ট করছেন। এই সব যুক্তি তর্ক আমার সবটাই জানা আছে। আপনি আর যা যা বলতে পারেন, সবই আমি এর আগেও হাজার বার শুনেছি। এমনও হতে পারে যে আপনি যা বিশ্বাস করেন সেটাই ঠিক। কিন্তু তাতেও আমার কিছু যায় আসে না। আমি একজন বৈজ্ঞানিক, ব্যাস্, শুধুমাত্র একজন বৈজ্ঞানিক। বিজ্ঞান শুধু আমার পেশা নয়, আমার সাধনা। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আমি মারণাস্ত্র নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু সবাই শুধু সেটুকুই জানে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে এই কাজটা, সভ্যতা আর বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য আমি যা করতে চাইছি তার একটা উপজাতক মাত্র। এই নিয়ে আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করেছি, তারপর ঠিক করে নিয়েছি যে আমার সম্পর্ক থাকবে শুধু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে, এছাড়া আর অন্য কিছুর সঙ্গে না।”
“কিন্তু, ড. গডবোলে, মানবসভ্যতা কী এরকম একটা চরম অস্ত্রের জন্য তৈরি?”
ড. জয়ন্ত গডবোলে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। “আদিনাথ বাবু, আপনি এখনও সেই একই কথা বলে চলেছেন। আমি তো আপনাকে এ বিষয়ে আমার যা বলার তা বলে দিয়েছি।”
আদিনাথ দাস চেয়ার থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। “ঠিক আছে, আপনি যদি এ বিষয়ে আলোচনা করতে না চান সেক্ষেত্রে আমার আর কিছু বলার নেই।” কপালে হাত দিয়ে তিনি কিছু যেন ভাবলেন। তারপর আবার বললেন, “ড. গডবোলে, আমি চলে যাচ্ছি, তবে আমি ভাবছি, আচ্ছা . . . আপনি আমাকে তখন যে চা কফি কিছু চলতে পারে কিনা জিজ্ঞেস করেছিলেন সেই বিষয়ে আমি কি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারি?”
ড. গডবোলের বিরক্তি খানিক কমেছে। লোকটা যখন চলে যেতে রাজি হয়েই গিয়েছে তখন এক কাপ চা-কফি খাইয়ে দিলে আর কীই বা ক্ষতি বৃদ্ধি হবে! “অবশ্যই। ব্ল্যাক কফি চলবে? চিনি দেওয়া না চিনি ছাড়া?”
“চলবে না দৌড়োবে! চিনি দিতেও পারেন, না দিলেও চলবে।”
একটু অপেক্ষা করতে বলে ড. গডবোলে রান্নাঘরের দিকে রওনা দিলেন। যখন তখন খেতে অভ্যস্ত বলে সেখানে কফির ব্যবস্থা করাই থাকে। ফ্লাস্ক থেকে গরম জল দুটো কাপে ঢেলে নিলেন। ইনস্ট্যান্ট কফি তাঁর ভালো লাগে না। গ্রাইন্ডেড কফির রেডি-মিক্সড প্যাকেট খুলে বের করলেন। সুগার-ফ্রির পেপার পাউচ আর কয়েকটা ক্রীম ক্র্যাকার একটা প্লেটে নিয়ে নিলেন। আর নিলেন দুটো চামচ।
সব কিছু নিয়ে তিনি যখন বসার ঘরে ফিরে এলেন ঠিক তখনই আদিনাথ তাঁর ছেলের ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তাঁর কানে এল আদিনাথের গলা “শুভ রাত্রি, অভি,” আর তারপরেই অভির আদুরে গলা, “শুভরাত্রি, দাস আঙ্কেল।”
ড. গডবোলে কফি তৈরি করলেন। বিস্কুট নিতে বলায় আদিনাথ বললেন উনি চা-কফির সঙ্গে অন্য কিছু খেতে পছন্দ করেন না। নিঃশব্দে দুজনে কফি পান করলেন। তারপর কাপ খালি হতেই আদিনাথ উঠে পড়লেন। বললেন, “ডক্টর, আপনার অনুমতি না নিয়েই আমি আপনার ছেলের জন্য একটা উপহার এনেছিলাম। আপনি যখন কফি আনতে গিয়েছিলেন তখন আমি ওকে ওটা দিয়ে এসেছি। আশা করি আপনি এজন্য আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।”
“অবশ্যই। ধন্যবাদ। শুভ রাত্রি।”
ভদ্রলোক বেরিয়ে গেলে ড. গডবোলে দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারপর বসার ঘর পেরিয়ে সোজা গিয়ে ঢুকলেন অভির ঘরে। “উফ্। নাছোড়বান্দা লোক বটে! যাক বাবা! গিয়েছে এবার। এসো অভি, এবার আমি তোমাকে গল্প পড়ে শোনাই—”
বলতে বলতে থেমে গেলেন তিনি। তাঁর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠল। অনেক কষ্টে তিনি নিজেকে সামলে নিলেন। চোখে মুখে যে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছিল আর গলার স্বরে যে কাঁপুনি তৈরি হয়েছিল, সেসব একটু সামলে নিজেকে শক্ত করে অভির বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি।
“আমাকে ওটা একটু দেখতে দেবে, সোনা?”
খুব সাবধানে তিনি জিনিসটা অভির থেকে নিজের হাতে তুলে নিলেন। হাতে ধরা জিনিসটার দিকে এখন বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছেন ড. জয়ন্ত গডবোলে। হাত দুটো তাঁর থরথর করে কাঁপছে।
কার্য-কারণ সম্পর্কে তাঁর মাথা এখন আর কাজ করছে না। শুধু মনে হচ্ছে একজন পাগলই এভাবে কোনও অবোধ শিশুর হাতে তুলে দিতে পারে এরকম গুলি ভরা একটা রিভলভার!
কিছু