সূচিতে ফিরুন

কৃত্রিম কল্পনা

লেখক - দিগন্ত পাল
img

খুব ভালো হবে না যদি এমন একটি অ্যালগোরিদম্ তৈরি করা যায় যা কি করতে হবে সেই সম্পর্কিত উপদেশ অর্থাৎ প্রোগ্রাম্ড ইন্সট্রাক্শন্ ছাড়াই নিজে থেকেই কোটি কোটি সংখ্যক বাক্যের প্রোগ্রামিং-র কোড লিখতে পারে এবং ন্যূনতম সময়ে সাদৃশ্য রয়েছে এমন বিভিন্ন রকমের প্রায় ত্রুটিমুক্ত সফ্টওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে দিতে পারে ! ইনপুট হিসাবে আমাদের যা দিতে হবে তা হল মাত্র একটি বা দুটি ইতিমধ্যে তৈরি করা নমুনা সফ্টওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের কোডবেস ! তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এই ধরনের অ্যালগোরিদম্ ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ দীর্ঘমেয়াদী লাভের মুখ দেখতে পারে ! শুধু তাই নয়, এমন অ্যালগোরিদম্ তৈরি করা গেলে, পরিষেবা ভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা এবং পণ্য ভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মধ্যে আর তেমন কোনও পার্থক্যই থাকবে না ! এমন অ্যালগোরিদম্; কিংবা সফ্টওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার এই ধরনের ধারা বর্তমানে কল্পপ্রযুক্তি হলেও ইতিমধ্যেই কিছুটা এই ধরনের অ্যালগোরিদম্ তৈরি করা গেছে এবং তা ইমেজ রিকগনিশন, স্পিচ রিকগনিশন, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ফিল্টারিং, প্লেয়িং বোর্ড ও ভিডিও গেমস, চিকিৎসায় রোগ নির্ণয়, এমনকি সেই সকল কাজেও রাজত্ব করছে যে কাজগুলি এতকাল কেবল মনুষ্য-মস্তিষ্কই করতে সমর্থ ছিল যেমন ছবি আঁকা বা কবিতা লেখা !

কখনও ভেবে দেখেছেন যে কেন শিশুরা ঘুমানোর সময়ে প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বেশী স্বপ্ন দেখে ? এটি এই কারণে যে তাদের মস্তিষ্ক তাত্ত্বিক শিক্ষার থেকেও বাস্তব জাগতিক শিক্ষায় বেশী আগ্রহী হয়। উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলিতে ব্যবহৃত অ্যালগোরিদমগুলির সাধারণ প্রকৃতি হলো যে সেগুলি শিশুদের মস্তিষ্কের মতো; অর্থাৎ সেগুলি উপদেশ বা প্রোগ্রাম্ড ইন্সট্রাক্শন্ নয়, বরং উদাহরণ বা ইন্সটান্স অনুসরণ করে শেখে ! এই অ্যালগোরিদমগুলিকে বলা হয় “ফিচার লার্নিং অ্যালগোরিদম্” বা “রিপ্রেসেন্টেশন্ লার্নিং অ্যালগোরিদম্” যেগুলির কর্মক্ষমতা অ্যালগোরিদমগুলি ব্যবহারের সাথে সাথে নিজে থেকেই বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ অ্যালগোরিদমগুলি সময়ের সাথে সাথে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ও সেই সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে ক্রমাগত শিক্ষা গ্রহণ করে যাতে সেগুলি আরও উন্নত ও কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে ! নিজে নিজেই শেখা অর্থাৎ স্ব-শিক্ষা হলো এই ধরনের অ্যালগোরিদমের বিশেষত্ব !

কৃত্রিম স্ব-শিক্ষা বা আর্টিফিশিয়াল সেল্ফ-লার্নিং প্রধানত দুই প্রকারের হয় – “সুপারভাইস্ড ফিচার লার্নিং” ও “আনসুপারভাইস্ড ফিচার লার্নিং”।

“সুপারভাইস্ড ফিচার লার্নিং” হলো একটি অ্যালগোরিদমের উদাহরণ বা নমুনা হিসাবে দেওয়া লেবেল করা তথ্যসমূহ থেকে শেখা, যেমন, ইমেজ রিকগনাইজার অ্যালগোরিদম্ বা চিত্র সনাক্ত করতে সক্ষম একটি অ্যালগোরিদম্ “মানুষ” ও “মানুষ নয়” এই দুই রকম লেবেল করা যথাক্রমে মানুষ উপস্থিত ও মানুষ অনুপস্থিত এমন কিছু চিত্র বিশ্লেষণ করে নিজে থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে এবং তারপর মানুষ উপস্থিত এমন যে কোন চিত্রকে সনাক্ত করতে পারে !

“আনসুপারভাইস্ড ফিচার লার্নিং”-এর ক্ষেত্রে; একটি অ্যালগোরিদম্ প্রথমে লেবেলবিহীন তথ্যসমূহ থেকে শেখে, তারপর সেই অ্যালগোরিদমের কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য সেটিকে লেবেলযুক্ত তথ্যসমৃদ্ধ পরিকাঠামোতে নিযুক্ত করা হয়। অ্যালগোরিদমটির প্রাথমিক শিক্ষায় যেহেতু ইনপুট হিসাবে দেওয়া তথ্যসমূহে লেবেল অনুপস্থিত থাকে, অ্যালগোরিদমটি তথ্যসমূহের হায়ার ডায়মেনশানাল ফিচার বা উচ্চ-মাত্রিক পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলির পরিবর্তে অন্তর্নিহিত লোয়ার ডায়মেনশানাল ফিচার বা নিম্ন-মাত্রিক পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলি নির্ণয় করতে শেখে। যেমন; পূর্বোক্ত ইমেজ রিকগনাইজার অ্যালগোরিদম্টি “আনসুপারভাইস্ড ফিচার লার্নিং”-র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করলে ঠিক কতগুলি সরলরেখা, কতগুলি বক্ররেখা, ও কতগুলি বিন্দুকে একে অপরের সাপেক্ষে ঠিক কিভাবে স্থাপন করলে একটি মানুষের চিত্র গঠিত হয় তা অ্যালগোরিদমটি নির্ণয় করতে শেখে ! ফলে সেই অ্যালগোরিদম্কে মানুষ উপস্থিত এমন চিত্রকে সনাক্ত করায় শুধু নয় বরং নতুন নতুন কাল্পনিক মানুষের চিত্র আঁকতেও সেই অ্যালগোরিদম্কে ব্যবহার করা যায় !

“ফিচার লার্নিং অ্যালগোরিদম্” বা “রিপ্রেসেন্টেশন্ লার্নিং অ্যালগোরিদম্” আসলে উদাহরণ বা নমুনা হিসাবে দেওয়া তথ্যসমূহ থেকে সেই তথ্যসমূহের ফিচার বা পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলি নির্ণয় করার জন্য ও পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলির শ্রেণীবিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় রিপ্রেসেন্টেশন্ বা উপায়গুলি আবিষ্কার করে, এবং তারপর কম্পিউটারকে সেই পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলি শিখতে ও কোন নির্দিষ্ট কাজে সেই পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলিকে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। অতীতে এই কাজ শুধু সনাক্তকরণে সীমাবদ্ধ থাকলেও মানুষ বর্তমানে এই ধরনের অ্যালগোরিদম্কে এতটাই উন্নত করে তুলেছে যে এই অ্যালগোরিদম্ কম্পিউটারকে মানুষের মত কল্পনা করার ক্ষমতা দিয়েছে ! ফলত কম্পিউটার আর কেবলই মানুষের উপদেশে চলা এক্কেবারে বোকা যন্ত্র নেই, সে হয়ে উঠেছে কিছুটা মনুষ্য-মস্তিষ্কের ন্যায় এক সৃজনশীল যন্ত্র !

সূচিপত্র