
গত শতাব্দীতে ফ্রান্স দেশে একবার।
বার হল বিজ্ঞাপন বড় মজাদার।।
লেখা ছিল – “পঁচিশ সেন্টিমের বিনিময়ে
আকাশ ভ্রমণ তরে সঙ্গে যাবে লয়ে”।।
কিছু কিছু লোক সেই মূল্য দিল ধরে।
তারা পেল চিঠি এর কিছু দিন পরে।।
এই কথা লেখা ছিল সেই চিঠিটাতে –
“মহাশয় শুয়ে যান ঘরে বিছানাতে।।
প্যারিসটা উনপঞ্চাশ অক্ষরেখা ‘পরে।
দিনেতে পঁচিশ হাজার কিমি বেগে ঘোরে।।
তার মানে আপনার আকাশ ভ্রমণ
পঁচিশ হাজার কিমি প্রত্যহ এখন।।
যদি বাহিরের দৃশ্য দেখা পেতে চাও।
জানালার পর্দাখানা টেনে খুলে দাও।।
তারার সুন্দর দৃশ্য রাতের আকাশে।
দেখবে নিখরচায় অতি অনায়াসে”।।
চিঠি পেয়ে কিছু লোক চটল বেজায়।
লোকটাকে শিক্ষা দিতে আদালতে যায়।।
আদালতে কেস ওঠে ঠকানোর দায়ে।
বিচারক জরিমানা করে তার রায়ে।।
জরিমানা দিয়ে সেই ব্যক্তি বলে রঙ্গে।
“এপুর সে মুভ” – ঠিক গ্যালিলিওর ঢঙে।।
(এপুর সে মুভ = Epur tse mouve. ক্রিশ্চান যাজকরা যখন ইনকুইজিশন চেম্বারে অত্যাচার করে গ্যালিলিওকে নতজানু হয়ে বলতে বাধ্য করেছিল – “আমি এতদিন যা বলেছি সব মিথ্যা” তখন দাঁড়িয়ে উঠে গ্যালিলিও পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুর কানে কানে এই কথাটা বলেছিলেন যার ইংরেজি
অর্থটা হল – “তাতে কি! এটা চলছেই”। )
*
এটা তো মজার গল্প হাসবে সবাই।
কিন্তু এতে আরও এক তত্ত্ব আছে ভাই।।
সূর্যকে কেন্দ্রেতে রেখে পৃথিবী তো ঘোরে।
আমরাও তার সাথে ঘুরতেছি জোরে।।
পৃথিবীর সাথে মোরা ঘুরতেছি সবে।
কিন্তু এর দুটো গতি মনে রাখতে হবে।।
একটা সে আহ্নিক গতি নিজ অক্ষ ‘পরে।
বার্ষিক গতিতে সূর্যে কেন্দ্রে রেখে ঘোরে।।
পৃথিবীর সাথে সাথে আমরাও ঘুরি –
এই দুই গতি নিয়ে মহাকাশ জুড়ি।।
বার্ষিক গতিতে আগে পৃথিবীটা যায়।
প্রতিটি সেকেণ্ডে ত্রিশ কিমি সে আগায়।।
আগানোর গতি আর গতি ঘুর্ণনের।
এ দু’এর সমন্বয়ে গতি মানবের।।
দিনেতে সূর্যের দিকে যে মানুষ থাকে।
ঘুর্ণন পিছন দিকে নিয়ে যায় তাকে।।
মধ্যরাতে সেই লোক থাকে উল্টো দিকে।
ঘুর্ণন আগিয়ে দেয় সেই লোকটিকে।।
সেকেণ্ডে ঘুর্ণন গতি আধা কিমি প্রায়।
রাতে যোগ দিনে বিয়োগ সেটা হয়ে যায়।।
দিন রাতের গতি এবার অঙ্ক কষা যাক।
দিন ও রাতের গতির এক কিমি ফারাক।।
তার মানে হরে দরে এটা বোঝা যায়।
একটা মানুষের গতি চব্বিশ ঘণ্টায় –
বারো ঘণ্টা কমে আর বারো ঘণ্টা বাড়ে।
পৃথিবী যে পৃষ্ঠে বয়ে নিয়ে যায় তারে।।
কখনও তিরিশ কিমি-র আধা কিমি কম।
কভু আধা কিমি বেশি অঙ্ক সে রকম।।
দ্বিপ্রহরে মধ্যরাত্রে কম বেশি মান।
সূর্যোদয়ে সূর্য অস্তে সমান সমান।।
অসুবিধা হলে কারও নিজে বুঝতে গিয়ে।
শিক্ষকের কাছে যাও দেবেন বুঝিয়ে।।
***