
১
আমার দুজন প্রতিবেশী আছেন যাঁদের পাড়ার লোকেরা খুব একটা ঘাঁটায় না ৷ তা ছাড়া পুজোর চাঁদা দেওয়া বা রত্তদানের অনুষ্ঠানে একবার মুখ দেখিয়ে আসা এসব করেন বলে পাড়ার ক্লাবের ছেলেরাও ওঁদের খুব একটা বিরক্ত করে না ৷ কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমাদের তিনজনেরই ভোটার লিস্টে নাম কাটা গেছে বলে
আমরা সব দলকেই প্রতিশ্রুতি দি তাদেরই ভোট দেব ৷
আমার বাঁ দিকের প্রতিবেশী হলেন গজেন ঘোষ চৌধুরি আর ডান দিকের প্রতিবেশীর নাম
হরিহর ঘরামী ৷ প্রত্যেকেরই নিজস্ব দোতলা ছোট বাড়ি আছে ৷ আমি থাকি একটি তিনতলা বাড়ির ফ্ল্যাটে ৷
গজেন বাবু বিপত্লীক ৷ দুটি ছেলে মেয়ে আছে ৷ একজন , মানে মেয়েটি গুজরাটে থাকে ৷ ছেলেটি ওনার সঙ্গেই থাকে ৷
তবে অফিসের কাজে হিল্লী দিল্লী ঘুরতে হয় ৷ গজেন বাবু কোলকাতার একটি নামকরা কলেজ থেকে পদার্থ বিদ্যায় BSc পাশ করে পুনার একটি কলেজ থেকে 'MBA করে একটি বিদেশী ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন ৷ পরে কোলকাতার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করেন। এখনও ওখানেই পড়ান ৷
হরিহরবাবুর বয়স তেষট্টি ৷ কেন্দ্রীয় একটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিনস অফিসে কাজ করতেন ৷ গত বছর রিটায়ার করেছেন ৷ ওনার একমাত্র সন্তান উর্মিলার বিয়ে হয়েছে এক ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে ৷ মেয়ে জামাই চেন্নাই তে থাকে৷ একটি নাতি ও আছে ৷ বছরে একবার হরিহর বাবু সস্ত্রীক চেন্নাই যান ৷
আমাদের পাড়ায় আমি এই দুটি মাত্র লোককে চিনি যাঁরা কাফকা ও নিকোলাই গোগলের নাম শুনেছেন ৷ গজেন বাবু তো গোগলের ওভার কোট গল্পটিও পড়েছেন ৷
আমি একবার শীত কালে দেরাদুনে বিলেত থেকে আনা একটি ওভার কোট পড়ে বেড়াতে গিয়ে এমন বিপদে পড়েছিলাম যে তিনদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল ৷ তিনটে সারমেয় একযোগে আমাকে আক্রমণ করেছিল ৷
সে আর এক গল্প ৷ পাড়ার অন্য লোকেরা মানুষ হিসাবে খারাপ নয় ৷ তবে বেশীর ভাগ লোকই পলাশীর যুদ্ধের সঙ্গে সিপাহী বিদ্রোহ গুলিয়ে ফেলে ৷ আমি ও তাই পাড়ার লোকের সঙ্গে বাজার দর , পলিটিক্স ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি ৷ কামু বলতে যদি কামুক ভাবে এই ভয় ও আছে ৷ আমি ভূতে বিশ্বাস করিনা ৷ হরিহরবাবু সব ভূতে বিশ্বাস করেন না তবে পিশাচে এবং আত্মাতে বিশ্বাস করেন ৷
গজেন বাবু ভূতে বিশ্বাস করেন তবে সেটা ডারউইনিয়ান ভূত ৷ মানুষ মরে ভূত হয় বা পেত্নি হয় এই সব উনি অবৈজ্ঞানিক মনে করেন ৷ তবে কিছু কিছু লোক যে ভূত দেখেছে সেসব ঘটনা সবই চোখের ভ্রম বা গাঁজাখুরী গল্প নয় ৷ ওনার মতে ভূত একটা আলাদা স্পেসিস ৷
সারভাইভাল অফ দি ফিটেস্ট তত্ত্ব মেনেই এরা প্রায় সুপার গিরগিটির মত এমন ক্যামোফ্লেজ নেয় যে এদের দেখা পাওয়া দুষ্কর ৷ তবে মাঝে মাঝে এরাও আশেপাশের সব কিছুর মধ্যে অদৃশ্য হয়ে থাকতে পারে না ৷
আমি জানি ওনার এই থিয়োরি প্রমাণ করা শক্ত ৷ আজ পর্যন্ত কোন জার্ণালে এরকম বিষয় নিয়ে গবেষণা পত্র বেরিয়েছে কিনা জানিনা ৷
আর আজ পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী এরকম কোন তত্ত্বের কথা বলেন নি ৷ তবে আমরা তিনজনই যা প্রত্যক্ষ করেছি তা প্রচলিত কোন থিয়োরী তে ব্যাখ্যা করা যায়না ৷
২
জরুরী কাজ না থাকলে শনিবার আমি, গজেনবাবু ও হরিহর বাবু গজেন বাবুর বসবার ঘরে আড্ডা মারি ৷ তবে খেলাধূলা সিনেমা নিয়ে আমরা খুব একটা মাথা ঘামাইনা ৷ সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা হত তবে বেশীর ভাগ সময়ই বিজ্ঞান , দর্শন এবং অলৌকিক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতাম ৷ তবে হরিহর বাবুর পিশাচে বিশ্বাস বাদ দিলে আমরা অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করতাম না ৷ হরিহর বাবু অবশ্য ওঁর পিসেমশাই এর সব গা ছমছম করা গল্প বললেও আমরা ও গুলো তারিণী খুড়োর গল্প হিসেবেই ধরতাম ৷ গজেন বাবুর একটা রাতদিনের লোক আছে ৷ বিকেলে চা আর সিঙ্গারা বা অন্য কিছু ওই কিনে নিয়ে আসে ৷ চা ও বেশ কয়েক রাউন্ড হত ৷
২
এই শনিবারও তার ব্যতিক্রম হলনা ৷
কিন্তু আজ আড্ডার বদলে যাকে বলা যায় জেরা চলল ৷ আসামী গজেন ঘোষ চৌধুরী ৷ হরিহর বাবু বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও পপুলার বিজ্ঞানের বই নিয়মিত পড়েন ৷ এমন কি ডারউইনের বই ছাড়া ও রিচার্ড ডকিন্সের দুটি বই আমার কাছ থেকে ধার নিয়ে পড়েছেন ৷ পিশাচে কেন বিশ্বাস করেন জানিনা তবে মনে হয় যে সব চরিত্র আশে পাশে দেখি তাতে ওনার এই বিশ্বাস অমূলক নয় বলেই মনে হয় ৷
হরিহর বাবুর গজেন বাবুর এই ডারউনিয়ান ভূত থিয়োরিতে আপত্তির মূল কারণ এই ভূতরা কোথায় থাকে, কি খায় ৷
গজেন বাবু ইতি মধ্যে আমাদের গুগল সার্চ করে জানিয়েছেন যে পৃথিবীতে ন রকমের প্রাণী আছে যারা অদৃশ্য হয়ে আমাদের চারপাশে রয়েছে৷
"কিন্তু এরা তো এক প্রজাতির মাকড়সা, সাপ বা ব্যাঙ্। এই সব প্রাণীরা ঝোপে ঝাড়ে বাস করে ৷
মানলাম যে এরা সারভাইভালের জন্য এরকম অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা রাখে ৷ কিন্তু আপনি বলতে চান আপনার এই ডারউনিয়ান ভূত স্যাপিয়েন্স প্রজাতি থেকেই বিবর্তিত হয়েছে? গজেন হরিহর বাবুর কথা শুনে বললেন, " আমি তাতো বলছিনা ৷ আমরা এখন জানি নেয়ানডারথাল আর আমাদের একই পূর্ব পুরুষ ছিল । "
আমি বললাম " দেখুন ডারউইনের সময়ে ডারউইনের থিয়োরি প্রমাণ করা খুব শক্ত ছিল ৷ শুধু মাত্র ফসিল থেকে আমাদের ও বাঁদরদের পূর্ব পুরুষ এক ছিল কিনা এটা প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে জেনেটিক্স ও ডি এন এ আবিষ্কারের ফলে ৷ আমাদের শরীরে নেয়ানডারথালের জিন আছে "
" সেটা আমি জানি ৷ এটাও জানি যে আমরা যাদের Ape বলি তাদের জিনের সঙ্গে আমাদের প্রায় ৯৬ শতাংশ মিল রযেছে"
এর পর গজেন বাবু যাকে বলা যায় ঝুলি থেকে বেড়ালটা বার করলেন ৷
বললেন যে এই থিয়োরী ওনার মাথায় প্রথমে আসেনি ৷ ওনার কাকা শ্যামাদাস ঘোষ চৌধুরী ওনাকে যে সব কাগজ পত্র পাঠিয়েছেন ওগুলি পড়ে এবং আরো কিছু বই পড়ে ওনার দৃঢ ধারণা হয়েছে কাকার থিয়োরিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না ৷ গজেন বাবুর কথা শুনে হরিহর বাবু বললেন " এটা কেন চেপে গিয়েছিলেন? আপনার কাকা যে একটু ক্ষ্যাপাটে এটা তো আপনিই বলেছেন। "
বস্তুত শ্যামাদাস ঘোষ চৌধুরী কে আমরা ভালভাবেই চিনি ৷
উনি প্রেসিডেন্সী কলেজে ফিজিয়োলজিতে ফার্স্ট ক্লাস ৷ এম এসসি করেছেন ব্যাঙ্গালোরে এক ইউনিভার্সিটি থেকে ৷ কিছু দিন কোলকাতার এক কলেজে পড়িয়েছিলেন পি এইচ ডি র জন্য। পুনেতে এক নামকরা অধ্যাপকের একটি প্রোজেক্টে রিসার্চ করার জন্য গবেষকের চাকরি ও নিয়েছিলেন, পরে আমেরিকাতে যান পি এইচ ডি করতে ৷ পরে আমেরিকাতেই থাকতে শুরু করেন অধ্যাপক হিসেবে নামও হয়েছিল ৷ কিন্তু গজেন বাবু বলেছিলেন ওনার এক গবেষণার জন্য যে গ্র্যান্ট চেয়েছিলেন ইউনিভার্সিটি তা স্যাংশন করেনি ৷
উনি প্রজেক্টটার নাম দিয়েছিলেন " The invisible hominid "
ইউনিভার্সিটির মতে এই সাবজেক্টটা " Too speculative"
" এটাই কি ওনার ডারউইনিয়ান ভূত প্রজেক্ট?
হরিহর বাবুর কথা শুনে গজেন বাবু বললেন "হ্যাঁ, এটাই সেই প্রজেক্ট ৷ কাকা অবশ্য অন্য বিষয়ে গবেষণা করে নাম করেছিলেন ৷ পিটার টমকিনস বলে কাকার এক সহকর্মী আছেন ৷ পিটার টমকিনসও কাকার এই থিয়োরিতে বিশ্বাস করেন ৷ টমকিনস নিজে গণিতজ্ঞ ৷ তবে ম্যাথামেটিক্যাল বায়োলজিতেও অনেক কাজ করেন ৷ এখন বায়োলজিতে গ্রাফ থিয়োরী বিশেষ করে ফাজি গ্রাফের উপর কাজ করছেন ৷"
গজেন বাবুর কথা শুনে আমি বললাম " তার মানে বিবর্তনবাদে প্রবাবিলিটি ও গ্র্যাফ থিয়োরীর যে প্রয়োগ হচ্ছে আপনার কাকা তার উপর কাজ করছেন। এ ব্যাপারে আপনিই ভালো বলতে পারবেন"
গজেন বাবুর কথা শুনে হরিহর বাবু বললেন " দেখুন আমার এসব ব্যাপারে বুদ্ধি খুব কম ৷ অংকে বিদ্যের দৌড় বি এসসি পাস কোর্স ৷ কিন্তু যে জিনিস দেখা যায় না শুধু অংক কষে তা ধরা যায়?”
এরা থাকে কোথায়?
এর উত্তরে গজেন বাবু বললেন, " দেখুন বিলেতে বেশ কিছু লোকে হানা বাড়ীতে রাত কাটান ভুত দেখার জন্য ৷ কাকা আর টমকিনস নিউইয়র্কের অনেক হানা বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন ইনফ্রা রেড ক্যামেরা আর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে যাতে ইনফ্রারেডে ও ধরা পরে। "
"নিউইয়র্কে হানা বাড়ি!!”
হরিহর বাবুর কথায় অবিশ্বাসের ভাব দেখে গজেন বাবু প্রায় টেনিদার স্টাইলে বললেন, " জানেন নিউইয়র্কে হানাবাড়ির ট্যুরের আয়োজন করা হয় ৷ বেশ আগে থাকতে বুক করতে হয়। "
হরিহর বাবু আমার মুখের দিকে তাকালে আমি বললাম," দেখুন আমাদের এবং সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর শরীর থেকে নিয়মিত ইনফ্রারেড তরঙ্গের আলোর বিকিরণ হয়। "
গজেন বাবু আমার কথা শুনে বললেন, " আমরা কাকাও তাই ভেবেছিলেন, ইনফ্রারেড চশমা পড়লে হয়ত এই ডারউইনিয়ান ভূত দেখা যাবে অবশ্য যদি ওরা হানা বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ডারউইনের ভূতও তো একটা প্রাণী।"
আমি বললাম "এটাও হতে পারে। ওরা শীতল প্রাণী , ওদের শরীর থেকে যে ইনফ্রা রেড বিকিরণ হয় তা এখন ও পর্যন্ত যে ইনফ্রা রেড ফ্রিকোয়েন্সি ধরা পড়ে ওরা তারা আওতায় আসেনা ৷”
কিন্তু ঠিক কোন সময় থেকে এই ডারউইনিয়ান ভুতের বিবর্তন ঘটেছিল?"
হরিহর বাবুর প্রশ্ন শুনে গজেন বাবু বললেন " কাকার মতে হোমো ইরেক্টাস বিলুপ্ত হওয়ার আগেই এই ভূতের বিবর্তন হয়েছিল ৷ নিজেদের বাঁচাবার জন্য এদের ওই অদৃশ্য হওয়া ক্ষমতা বিবর্তনের মধ্যেই এসেছিল ৷
" আপনার কাকা কি নিউইয়র্কে এই ভূতের দেখা পেয়েছিলেন?"
হরিরহর বাবুর প্রশ্ন শুনে গজেন বাবু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন ৷ পরে বললেন " কাকা একটা বাড়িতে এমন কিছু দেখেছিলেন যাতে ওনার সন্দেহ হয়েছিল ওই প্রজাতি এখনও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়নি। "
" কি দেখেছিলেন "
" দেখুন ওখানে যে হানা বাড়িতে ওনারা গিয়েছিলেন তার কাছাকাছি দুটি রেস্তোরাঁ ছিল ৷ নিউইয়র্ক শহরে প্রচুর রেস্তোরাঁয় ফুড প্যান্ট্রি আছে ৷ ওখান থেকে এই ডারউইন ভূতেরা খাবারের প্যাকেট নিয়ে আসলে কেউ টের পাবেনা ৷ আর একটা কথা ৷ এই প্রজাতিরও বিবর্তন হয়েছে ৷ মানুষের মত বুদ্ধি না হলেও ওদের বুদ্ধি শিম্পান্জী দের থেকে বেশি ৷"
" কিন্তু আপনার কাকা ঠিক কি দেখেছিলেন ?”
" কাকাদের ইনফ্রা রেড ক্যামেরায় ওনা রা যা দেখেছিলেন তাতে মনে হয়েছিল মানুষের মতই দেখতে কোন প্রাণী ওখানে ছিল ৷ অবশ্য খুব কম সময়ের জন্য এটি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল ৷
টমকিনস নাকি এক পলকের জন্য একটি মুখ দেখতে পেয়েছিল।
অনেকটা বিকৃত মানুষের মুখ ৷ হোমো ইরেক্টাসের যেরকম মুখের চিত্র বিজ্ঞানীরা স্কাল থেকে কমপিউটারের সাহায্যে তৈরী করেন ৷"
হরিহর বাবু বললেন উনি গুগল সার্চ করে দেখেছেন মানুষের ইনফ্রারেড ছবিতে মুখটা অস্পষ্ট থাকে।
আমি বললাম " হরিহর বাবু এখন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে ইনফ্রা রেডের ছবি থেকে একটা লোকের একদম ক্যামেরার ছবির মতই পরিষ্কার ছবি পাওয়া যাবে ৷ অবশ্য কুভিয়ের বেঁচে থাকলে কোন কমপিউটারের দরকার হত না।”
“ Georges Cuvier ছিলেন.এক নাম করা ফরাসী বিজ্ঞানী৷ ৷ তাঁর নাকি এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিল" গজেন বাবুর কথা শুনে আমি বললাম, " ঠিক বলেছেন ৷ কোন জন্তুর পায়ের হাড় দেখে উনি পুরো জন্তুটার চেহারা তৈরী করতে পারতেন ৷”
হরিহর বাবু বললেন " কিন্তু এই ডারউইনিয়ান ভূত বা হোমোইরেক্টাস বা যাই বলুন না ওদের হাড় পাবেন কি করে ? "
" কাকার মতে পৃথিবীর সব কবরখানা খুঁড়লে হয়ত ওদের ফসিল পাওয়া যাবে ৷ আর কাকার মতে এরা প্রায় বিলুপ্ত ৷ হয়ত কাকারাই শেষ স্পেসিমেন দেখেছিলেন ৷ "
হরিহর বাবু ছাড়ার পাত্র নন ৷ " তা হলে ভূত কেন এখনো লোকে দেখে "
আমি বললাম " হরিহর বাবু আপনি যেসব আত্মা ইত্যাদির গল্প শুনেছেন তারা হয় সাদা কাপড় বা যে পোষাক জীবিত অবস্থায় পরত সেগুলি পরেই ভূত হিসেবে দেখা দেয় ৷ আচ্ছা মানুষের না হয় আত্মা হয় ৷ পোষাকেরও কি আত্মা হয়? ”
যদি আত্মা বা soul বলেও সূক্ষ্ম কিছু থাকে তা কখনো সেজে গুজে ভূত হিসেবে দেখা দিয়ে মানুষ কে ভয় দেখাবে এটি বিশ্বাস করা কঠিন ৷
গজেন বাবুর কাকার থিয়োরী সত্যি কিনা জানিনা,তবে এটিকে গাঁজাখুরি গল্প হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া যায় না ৷ বিজ্ঞানেও কত কিছু অজানা থেকে গেছে ৷ আমাদের ইউনিভার্সের মত অসংখ্য ইউনিভার্স বলে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন ৷ একটি ইউনিভার্সে হয়ত কেউ মৃত, অন্য কোন ইউনিভার্সে সে জীবিত ৷ কোন উপায়ে যদি ক্ষণিকের জন্যও সেই ইউনিভার্সে আমরা প্রবেশ করতে পারি তাহলে নিশ্চয় মনে হতে পারে আমরা ভূত দেখছি ৷
গল্প করতে করতে কখন অন্ধকার হয়েছে বুঝতে পারিনি ৷ গজেন বাবুর বসবার ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে খোলা যায়। কাজের লোকটি চা নিয়ে আসবে বলে অন্ধকার হলেও ঘরের আলো জ্বালানো হয়নি ৷ কোন কারণে গজেন বাবু একটা ইনফ্রা রেড ল্যাম্প কিনেছেন ৷ পায়ের ব্যাথায় কাজ দেয় ৷ সেটা অন আছে ৷ কিন্তু আমরা তো ওই আলো দেখতে পারব না ৷ আমার একটা সন্দেহ জাগল ৷ গজেন বাবু কি কিছু দেখেছিলেন যা আমাদের বলেন নি ৷
হঠাৎ দরজা খুলে কেউ যেন ঢুকল ৷ ভাবলাম, গজেন বাবুর চাকর লাস্ট রাউন্ড চা নিয়ে এসেছে। কিন্তু ক্ষণিকের জন্য আমরা যে মুখ দেখলাম তা কোন দিন ভুলতে পারব না।
হরিহর বাবু তো আর্তনাদ করে উঠলেন ৷
এক সেকেন্ডেরও কম সময় ওই মুখ দেখেছি ৷ গজেন বাবুর কাকা যে ছবি পাঠিয়ে ছিলেন হুবহু সেই মুখ ৷ হরিহর বাবু সাহস করে উঠে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিলেন ৷ কিন্তু আমরা তিনজন ছাড়া কেউ কোথাও নেই ৷
আর একটা জিনিস ৷ প্লেটে যা খাবার অবশিষ্ট ছিল সব উধাও।
আমরা কি লাস্ট অফ দি মোহিকান্সের মত ডারউইনিয়ান ভূতের শেষ বংশধরকে দেখলাম ৷
না কি সব মনের ভুল !
" There are more things in heaven and earth, Horatio./ Than are dreamt of in your philosophy"
চলবে -------