সূচিতে ফিরুন

মৎস্যাবতার

লেখক - শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়
img

ভোলার বড়ঠাকুর্দার সঙ্গে এর আগে আমার একেবারে মুখোমুখি দেখা হয় নি বটে, তবে খুব ছোটবেলায় একবার ভোলার রাঙামাসিমার মেয়ের বিয়েতে দূর থেকে ওনাকে গাড়িতে উঠতে দেখেছিলাম। তখন শীতকাল। মাথায় হনুমান টুপি, গায়ে বেশ ভালো করে কাশ্মীরী শাল জড়ানো আষ্টেপৃষ্ঠে, ওদিকে আবার খাটো করে ধুতি পরা। ফর্সা ধবধবে একজোড়া লিকলিকে সরু ঠ্যাং বেরিয়ে আছে ধুতির তলা থেকে। তখন‌ই নাকি ওনার বয়স একশো পেরিয়ে গেছে। তাও দেখলাম বুড়ো দিব্যি সরু সরু ঠ্যাং ফেলে ফেলে টকাটক ট্যাক্সিতে চড়ে বসলেন। বুড়োর পায়ে শীত লাগে না বুঝি, কী অদ্ভুত! ব্যস্, এইটুকুই মনে আছে। তা সেই ঠাকুর্দাকে যে এতদিন পরে ভোলার মেজদার বিয়ের সময় স্বচক্ষে দেখব, তা আশাই করিনি। একশো পনেরো বছর অব্দি কেউ আবার বেঁচে থাকে নাকি! যত্তসব গালগল্প আর কি। কিন্তু ভোলাটা এমনি মিথ্যে কথা বলে, মিথ্যের পর মিথ্যে কথার ঢেউ বানায়, যে কিছুক্ষণ শুনলে যে কেউ ভাববে সবটাই সত্যি।

তবে তোমাদের বললে বিশ্বেস হবে না, বিকেলবেলায় সেই ভোলার বড়ঠাকুর্দা আমাদের সঙ্গে কফিস্টলে বসে সাত কাপ কফি আর গোটা বিশেক বাঁধাকপির পকোড়া খেলেন। ননভেজের মধ্যে ভোলারা রেখেছিল ফিশচপ। তা ঠাকুর্দার নাকি মাছ খাওয়া মানা। তাই আমরা ফিশচপ খেতে পেলুম, ন‌ইলে ওগুলোও বুড়োর পেটে যেত নিশ্চিত। হাঁদা আমায় জিজ্ঞেস করলে, “হ্যাঁ রে, বুড়ো এত খাচ্ছে কিকরে এই বয়সে? হজম করতে পারবে বলে তো মনে হয় না!”

আমি বললুম, “কি জানি বাবা! ভোলাদের অনেক কিছুই আমার বড় রহস্যময় লাগে।‌ ওর মুখেই তো শুনেছি, ওর বড় জ্যাঠামশাই, মানে ঐ বড়ঠাকুর্দার বড় ছেলে, এমন মস্তবড় সায়েন্টিস্ট যে এক জন্তু থেকে আরেক জন্তু বানিয়ে ফেলেন কয়েকদিনের মধ্যে!”

আমাদের মধ্যে বিজ্ঞানের খবর সবচেয়ে বেশি রাখে লালু। ওর মামা আসলে ডাক্তার। লালু আমার এ কথা শুনে বললে, “ধুস্! ওটা তো জিনোম এডিটিং। জন্তু থেকে জন্তু নয়, মানুষ বা গাছপালা কিংবা জানোয়ারের জিনের বিভিন্ন অংশ পাল্টে দেয়া। তোর কি মনে হয়, ভোলার বড় জ্যাঠামশাই হাঁস থেকে মুরগি, বাঘ থেকে হাতি বানাতে পারে?”

আমি বলি, “আহা, তা পারে কি না পারে তুই জানিস? এসব সায়েন্টিস্টদের বিশ্বেস হয় না। আমাদের ইশকুলের ভৌতবিজ্ঞানের স্যারের কথাই ভাব, হয়ত জ্যাঠামশাই তাঁর বুড়ো বাবাকে এমন ইনজেকশন দিয়েছেন যে বুড়োর নতুন লিভার, নতুন পাকস্থলী গজিয়েছে। না হলে একশো পনেরো বছর বয়সে এসে কেউ অত গুলো ভেজ-পকোড়া খেতে পারে! তাছাড়া ঠাকুর্দার দাঁতগুলো দেখেছিস? সামনের দিকের দুটো দাঁত কেমন যেন হাতির দাঁতের মত মুখের দুইপাশ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে !”

লালু বিজ্ঞের মত বললে, “তুই জানিস না। তেমন তেমন বয়স হলে মানুষের দাঁত ঐরকম বাইরে বেরিয়ে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।”

এর উত্তরে আমি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু তখনই খেয়াল করলাম যে তিন নম্বর ব্যাচটা খেতে বসতে যাচ্ছে। আমরা সবাই ছুটলাম চেয়ার ধরার আশায়। ভোলারা নেমন্তন্ন‌ও করেছে গাদা লোককে, দেরি হলে আর কিছু জুটবে না! তাই তখনকার মত এই আলোচনা থেমে গেল।

রাতে আমাদের শোবার ব্যবস্থা হল ন্যাপলাদের ঘরে। ভোলাটা এমনি ফাঁকিবাজ আর কি বলব তোমাদের, ওকে যে মাথা গোণার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, সেটায় রীতিমতো ফাঁকি মেরে খেয়েদেয়ে পালিয়ে এসেছে আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। ন্যাপলাদের মস্ত হলঘরে ঢালাও করে পাতা বিছানায় গা এলিয়ে মিঠেপাতা পান চিবোতে চিবোতে লালু বললে, “ভোলা, তোর ঠাকুর্দা নাকি এক বালতি মাটনকষা পুরো সাবড়ে দিয়েছে শুনছিলাম? হ্যাঁ রে, সত্যি নাকি?”

ভোলা ঘাড় নেড়ে বলে, “ঠিক‌ই শুনেছিস। ঠাকুর্দার এক মাছ ছাড়া সব চলে। আমার জন্ম ইস্তক দেখে আসছি ঠাকুর্দা ঐরকম‌ই বালতি বালতি খেতে পারে।”

আমি জিজ্ঞেস করি, “তা হ্যাঁ রে, ঠাকুর্দাকে তোরা কি খাইয়েছিলি বলতো যে আজ এই বয়সে এরকম খাইয়ে! তার উপর দাঁতগুলো…”

ভোলা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “এছাড়াও আছে। ঠাকুর্দা পা দিয়ে শোঁকে, আর থেকে থেকে এমন একটা হুঁকোটানার মত শব্দ বের করে মুখ থেকে যে অন্ধকারে শুনলে ভয় পেয়ে যাবি। সেবার মেজদার অফিসের বস্ এসে তো ঐ শব্দ শুনেই পালাতে গিয়ে জম্পেশ একখান আছাড় খেয়ে মাজা ভাঙল!”

আমরা সবাই হাঁ হয়ে গেলাম। ভোলার সব কথা বিশ্বেস করতে ইচ্ছে হয় না বটে, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে মাঝে মধ্যে বিশ্বেস জন্মায়। তবে আজ একেবারে লাগামছাড়া গুল দিচ্ছে বলে মনে হল। এমনকি কোনো কথায় অবাক হয় না যে লালু সেও বললে, “একটু রেখেটেখে গুল দে ভোলা, তোর ঠাকুর্দার নাকডাকা না হয় ওরকম বদখত হতেও পারে, কিন্তু তিনি পায়ে করে গন্ধ শোঁকেন- এটা কী! বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু ভোলা!”

ভোলা ঠোঁট উল্টিয়ে বললে, “সে তোরা বিশ্বেস না করলে ভারী বয়েই গেল! তাতে তো আর সমুদ্রের রবিন মাছ মিথ্যে হয়ে যায় না! নাকি আমার বড় জ্যাঠার সব গবেষণা বেকার?”

আমি ভারী আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “সমুদ্রের রবিন মাছ মানে? তার সঙ্গে তোর ঠাকুর্দার কি সম্পর্ক?”

লালু ফস্ করে বলে বসলে, “তোর জ্যাঠা মাছ নিয়ে গবেষণা করত? মাছ নিয়ে তো লোকে ঝোল বানায়, ভাজে, গবেষণা করবে কেন?”

পরপর এরকম দুটো প্রশ্নে ভোলা অস্থির হয়ে বললে, “দ্যাখ, নেহাৎ তোরা বিয়েতে নেমন্তন্ন পেয়ে এসেছিস, ন‌ইলে আমার বড় জ্যাঠা আর তার গবেষণা নিয়ে এরকম অপমান আমি মোটেই সহ্য করতাম না‌।”

নির্ঘাত একটা দক্ষযজ্ঞ বেঁধে যেত। কিন্তু ঐ ন্যাপলা, আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাথার ছেলে, সেই সাধারণত আমাদের সব ঝামেলা মেটায়। আজ‌ও আমাদের সবাইকে বকেঝকে ঠাণ্ডা করে শেষে বললে, “ভোলা, গোটা ব্যাপারটা খোলসা করে বল দিনি। তোর বড় জ্যাঠা ঠিক কিভাবে তোর ঠাকুর্দাকে রবিন মাছের ঝোল খাইয়েছে?”

ভোলা গুছিয়ে নিয়ে বসল। ওর রাগ কমাতে ওকে আরো দুইপিস মিঠেপাতা পান এনে দেয়া হয়েছে। সঙ্গে এক বোতল ঠাণ্ডা কোকাকোলা। সেগুলো একটা একটা করে সদগতি করতে করতে ভোলা বললে, “রবিন মাছ থাকে সমুদ্রের একেবারে তলায়। বড় জ্যাঠা যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় জেনেটিক্স নিয়ে রিসার্চ করছিলেন, তখন তাঁর ল্যাবরেটরিতে জার্মেনির এক বড় বিজ্ঞানী বল্ডুইন সায়েব এসে বললে, “ড্যাকশিনা, (বড় জ্যাঠার আসল নাম কিনা দক্ষিণারঞ্জন) তুমি সী-রবিনের ঠ্যাং-গজানো জিন নিয়ে গবেষণা করো। তোমার উন্নতি হ‌ইবেক!” এই শুনে জ্যাঠা ওখানকার বড় হোটেলে গিয়ে টানা তিন মাস রবিন মাছভাজা খেয়েটেয়ে দেখলেন, ব্যাপারখানা কি! বোধহয় পাবদা মাছের মত খেতে হবে, যাক গে। আসল কথাটা হচ্ছে, সমুদ্রের একেবারে মেঝেয় রবিন মাছ ঘোরাঘুরি করে। তার একেবারে আবোলতাবোল ছড়ার বকচ্ছপের মত অবস্থা। সামনের দিকের পাখনাদুটো হয়ে গেছে রামধনুরঙা দুটো ডানা। তাই মেলে ইচ্ছে হলে, জলের তলায় আর উড়বে কোথায়, তবে ঝাঁপটাপ মেরে বা গোঁতাগুঁতি করে এদিকে সেদিকে চলাফেরা করে। তবে, সবথেকে বড় আশ্চর্য এই, যেটা তোরা একেবারে বিশ্বেস করবি না, রবিন মাছ কয়েকটা লম্বা লম্বা সরু সরু ঠ্যাং দিয়ে সমুদ্রের মেঝেয় হেঁটে বা ছুটে বেড়াতে পারে!”

লালু হাঁ করে বললে, “অ্যাঁ! মাছ হাঁটে?”

আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভোলা বলে চলল, “হাঁটে তো বটেই। বিশ্বেস না হয় ইউটিউব দেখবি। আর মুখের মধ্যে কেমন একটা গুড়গুড় গুড়গুড় করে আওয়াজ‌ও করে। তো সে যাই হোক, জ্যাঠা পড়লেন রবিন মাছের এমন একরকম জিন নিয়ে, যাকে নাকি কী একটা ফ্যাক্টর বলে…”

লালুটা এমনি পাকা যে ভোলাকে থামিয়ে মাঝপথে বলে বসলে, “হুঁ, ওরে কয় ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর!”

ভোলা খটোমটো শব্দটা শুনে থতমত খেয়ে বললে, “তা হবে, ইয়ে কি যেন বলছিলাম?”

আমি তাড়াতাড়ি খেই ধরিয়ে দিয়ে বলি, “ঐ যে, মাছের ঠ্যাং-গজানো জিন নিয়ে জ্যাঠা রিসার্চ করছিলেন…”

ভোলা বললে, “হ্যাঁ, ঠিক। তা জ্যাঠা যখন এসব নিয়ে পড়ছিলেন, ঠাকুর্দাও তখন বাঁশল‌ইতে দেশের বাড়িতে পড়ছিলেন, মানে আছাড় খেয়ে সিঁড়ির উপর থেকে একেবারে নীচে। ব্যস্, পা মাজা থেকে এমনি ভাঙল যে সে আর জোড়াতালি দেবার অবস্থায় র‌ইল না। তার উপর সেখানকার হাতুড়ে ডাক্তার এমনি চিকিৎসা করে দিলে যে যখন কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করা হল তখন জানা গেল মাজা থেকে পা গোটাটাই আর ঠিক হবার কোনো জো নেই। বড় জ্যাঠা তার দুইদিন পরে বাড়ি ফিরে এসে সব শুনলেন। তারপর আর একবছর এদেশ ছেড়ে নড়লেন না। বাঁশল‌ই স্টেশনে এখন যে পোড়োঘরটা দেখতে পাচ্ছিস, ঐ যে ডোবার পাশে বড় বটগাছটার গা ঘেঁষে, ঐটা তখন পুরনো স্টেশনমাস্টারের থাকার জায়গা ছিল। সেখানে বড় বড় ঘর। দু’তিনটে তখন‌ই সারাবছর খালি পড়ে থাকত। জ্যাঠামশাই এই বাড়ি ছেড়ে তাঁর ল্যাবরেটরির যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে ঐখানে একটা ঘরে আস্তানা গাড়লেন। বাড়িতে থাকলে আমরা কিংবা পোষা হুলোটা বড় জ্বালাতন করত কিনা! তা সেইখানে ঐ ডোবায় চলল জ্যাঠামশাইয়ের আবিষ্কার করা নতুন নতুন প্রজাতির রবিন মাছের চাষ। রবিন মাছ সাগরের মাছ। কিন্তু জ্যাঠামশাই জিনে অদলবদল ঘটিয়ে তাদের পাড়াগাঁয়ের ডোবার মাছ বানিয়ে ফেলেছিলেন।

মাঝেমধ্যে ঠাকুর্দার গা থেকে রক্ত নিয়ে আসেন আর পরীক্ষা চালান। জ্যাঠামশাইকে বলতে শুনেছি, “বুঝলি ভোলা, যে জিনের কারসাজিতে রবিন মাছের ঠ্যাং গজায়, সেইরকম জিন মানুষের দেহেও আছে, তবে বিবর্তনের প্যাঁচে পড়ে ঘুমিয়ে আছে।” তখন ছোট ছিলাম কিনা, কিছু বুঝতে পারিনি। পরে বুঝেছি, জ্যাঠামশাই আসলে ঠাকুর্দার মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সেই জিনটাকে জাগাতে চাইছিলেন। শেষের দিকে তাতে সাফল্য‌ও মিলেছিল। আর তাই এখন ঠাকুর্দার এই অবস্থা।”

অবস্থা আমাদের‌ও বিশেষ সুবিধার ছিল না। তবু ঠাণ্ডা মাথার ন্যাপলা কোনোগতিকে জিজ্ঞেস করলে, “তার মানে তুই বলছিস জ্যাঠামশাইয়ের জেনেটিক ওষুধ নিয়ে ঠাকুর্দার গায়ে ফের ঠ্যাং গজিয়েছে? মানে, ওগুলো মানুষের ঠ্যাং নয়?”

ভোলা মিটিমিটি হেসে বলে, “ঠিক ধরেছিস, এতক্ষণে! সাদা সাদা ওগুলো মাছের কাঁটাও বলতে পারিস। ওতে ঠাকুর্দার ভারি সুবিধে হয়েছে। ঠ্যাং, মানে কাঁটা কিনা, তাই কাপড়চোপড় পরার বালাই নেই। ঠাণ্ডা গরম‌ও লাগে না। উল্টে রবিন মাছ যেমন তার এই ঠ্যাং দিয়ে শোঁকাশুঁকি করে সমুদ্রের তলায় মাটি খুঁড়ে গেঁড়ি-গুগলি তুলে আনে, তেমনি ঠাকুর্দাও তাঁর ঠ্যাং দিয়ে খাবারের গন্ধ শুঁকতে পারেন। তোদের সামনেই তো দেখলি মাংসের বালতিতে পা ডুবিয়ে গন্ধ শুঁকছিল। আর রবিন মাছের জিন ঢুকে যাওয়ার পর থেকে ঠাকুর্দার খিদেটাও ভয়ানক হারে বেড়ে গেছে। শুধু মাছটাই যা খায় না। হাজার হোক, স্বজাতি কিনা। নিজের লোকদের খেতে নেই‌। তবে ডানাফানা গজিয়েছে কিনা সেইটে…”

ভোলার ব্যাখ্যা হয়ত আরো কিছুক্ষণ চলত, কিন্তু এমন সময় ক্যাটারারের হিসেবে কী সব গোলমাল ধরা পড়েছে বলে বাইরে থেকে ভোলার নাম ধরে তার এক কাকা বাজখাঁই গলায় হাঁক দিচ্ছিলেন। সেই শুনে ভোলাটা তড়াক করে লাফিয়ে উঠে আমাদের হাঁ করা মুখের সামনে দিয়ে একেবারে ধাঁ হয়ে ছুট লাগাল। তাড়াতাড়ি করে যাবার সময় ব্যাটা নিজের মোবাইল ফোনটা ফেলে গেছিল। তাড়াহুড়োতে স্ক্রিন অফ্ করতেও ভুলে গেছে। অন্যের ফোনের খোলা স্ক্রিনে তাকানো যে বেয়াদবি সেটা বাড়িতে ছোড়দা শিখালেও এখানে না তাকিয়ে আমরা পারলাম না। দেখি বিজ্ঞানের কী একটা ওয়েবসাইট খোলা আছে, তাতে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় একটা বিতিকিচ্ছিরি মাছ দেখাচ্ছে, সম্ভবত ওটাই ভোলার রবিন মাছ। পাশে ডেভিড কী একটা সায়েবের ছবি। ইংরেজি লেখা অতশত বুঝি নে বাপু, যাই হোক সেসব পড়ে লালু বললে, “ব্যাপারটা খানিকটা হলেও বোঝা যাচ্ছে। বছর চল্লিশ আগে চব্বিশ সালে ডেভিড সায়েবের রিসার্চটিম রবিন মাছের এই ঠ্যাংগুলোর উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা করছিল বটে। এখন দেখা যাচ্ছে এঁয়ারা সেই জিন ব্যবহার করে প্রতিবন্ধী মানুষের পা পর্যন্ত গজানোর কায়দা আবিষ্কার করে ফেলেছেন। বুঝলি, ভোলার জ্যাঠা নির্ঘাত বাঁশল‌ইতে বসেই এই কৌশলটা তখন আবিষ্কার করে ঠাকুর্দার উপরে প্রয়োগ করে থাকবেন। জিনিয়াস লোক বলতেই হবে। তবে রবিন মাছের জিন পেয়ে বুড়ো ঠাকুর্দার স্বভাব যে অনেকখানি পাল্টে গেছিল তাতে সন্দেহ নেই‌। জ্যাঠামশাই হয়ত এই ভয়েই গবেষণার কথা পাঁচকান করেন নি।”

আমরা তাজ্জব বনেই ছিলাম। এইসব ব্যাখ্যায় আর নতুন করে অবাক হ‌ওয়ার মত কিছু পেলাম না।‌ কেবল সবাই মিলে প্ল্যান করে রাখলাম আরেকটু ঠাণ্ডা কমলে বাঁশল‌ই স্টেশনের পাশে ঐ বটগাছ-ঘেরা ডোবাটায় রবিন মাছ ধরতে যাব। তোমরাও আসতে পারো, আপত্তি নেই। তবে সাবধান, ভোলার ঠাকুর্দার সামনে ভুলেও রবিন মাছের কথা তুলো না। ভালো হবে না বলে রাখলাম, হ্যাঁ।