সূচিতে ফিরুন

কেপলার ৪৫২বি এর এলিয়েন ভূত

লেখক - দীপঙ্কর বসু
img

তখন আমরা এগিয়ে চলেছি অ্যান্টিম্যাটার এবং আয়ন থ্রাস্টার প্রযুক্তিবিদ্যায় তৈরি মহাকাশযানে কেপলার ৪৫২বি এর উদ্দেশ্যে। বাইরে চারিদিক নিকষ কালো অন্ধকার। মহাজাগতিক ঝড়ের প্রভাবে যে চৌম্বকীয় তরঙ্গ এবং আয়নের তরঙ্গ তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে কসমিক ধূলিকণার সংঘর্ষে মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে আলোর ঝলকানি। হঠাৎ হঠাৎ দেখা যাচ্ছিল নেবুলা আর গ্যালাক্সির অপূর্ব সুন্দর রকমারি আলোর ঝলক। কল্পনায় পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছিলাম অপূর্ব সুন্দর ঐ আলোকের মাঝে। যাওয়ার পথটি অবশ্য মসৃণ নয়। অকল্পনীয় ভয়ের শব্দহীন জগত। কল্পনাতেও তাই মাঝে মাঝে কাঁপুনি লাগছিল শরীরে। বাস্তবে তীব্র বিকিরণের ঝড়, চৌম্বকীয় তরঙ্গ, কসমিক রশ্মি আর কসমিক ধূলিকণার আবহাওয়াকে কোন আমল না দিয়ে এগিয়ে চলেছিল আমাদের মহাকাশযান। আমরা মানে সুইডেনের হ্যারি নরডিন, ভিয়েতনামের মহিলা বিজ্ঞানী ভ্যান হিউ তান এবং ভারতের আমি মানে নিশিকান্ত ঘোষ ওরফে ন্যাকা ঘোষ । এছাড়াও ছিল আগের দুটি অভিযানে এলিয়েন দেখতে পেয়েছেন এমন দাবি করেছেন যে ইংরেজ বিজ্ঞানী সেই রবার্ট ওয়াটকিনস্‌। যানে আমাদের সঙ্গে ছিল আরও তিন যন্ত্রদানব। যানের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম আমাদের সঙ্গে ওরাই করছিল।

কি ভাবে যুক্ত হলাম এই অভিযানের সঙ্গে সেটাই এবার বলি।

সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিন। ২১০১ সাল আসতে আর মাত্র তিন মাস বাকি। কয়েকদিন ধরে হৈ চৈ চলছিল প্রচার মাধ্যমে। কেপলার ৪৫২ বি তে না কি দেখা গেছে এলিয়েনদের। একবার নয়, দু দু বার। দু বারের অভিযাত্রীদের মধ্যে শুধুমাত্র রবার্টই এই দাবি করেছিল। যদিও ওঁর সহযাত্রী বিজ্ঞানীরা কেউই ওঁর দাবির সঙ্গে সহমত হন নি। কেপলার ৪৫২ বি তে এলিয়েনদের থাকার সম্ভাবনা নিয়ে বিজ্ঞানীদের একাংশের মধ্যে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ থেকেই আশার সঞ্চার হয়েছিল। এর পিছনে অবশ্য কারণও ছিল। পৃথিবীর থেকে আকারে সামান্য বড়, বয়সে পৃথিবীর থেকে মাত্র ১.৬ বিলিয়ন বছরের বড় এই বহির্গ্রহ । সে কারণে এই বহির্গ্রহটি প্রচুর সময় পেয়েছে জীবজগৎ তৈরির জন্য। এছাড়া এটি এর নক্ষত্র কেপলার ৪৫২ এর বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত।

এলিয়েনদের দেখতে পাওয়া নিয়ে অবশ্য বিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা মতামত তৈরি হয়েছিল। কেননা, ১৪০০ আলোকবর্ষ দূরে সিগনাস বা জায়র তারামন্ডলে থাকা কেপলার ৪৫২ বি তে যে সাতবার অভিযান হয়েছে, তার মধ্যে দু বারের অভিযানের একজন অভিযাত্রীই শুধুমাত্র এলিয়েনদের দেখা পাওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। সংবাদ মাধ্যমের সত্য মিথ্যা নানা প্রচারে প্রভাবিত সাধারণ মানুষের মধ্যেও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল বিস্তর। সাংবাদিকদের একাংশ তো কেপলার ৪৫২বি তে মহাকাশচারী ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে প্রচার করে বাজার সরগরম করে তুলেছিলেন। তাঁদের মতে বিভিন্ন মহাকাশ অভিযানে হারিয়ে যাওয়া মহাকাশ অভিযাত্রীদের অতৃপ্ত আত্মাকেই দেখা গেছে কেপলার ৪৫২বি তে। বিজ্ঞানে মানুষ বিস্তর এগিয়ে গেলেও অন্ধ বিশ্বাস যে বিলিন হয়ে যায় নি ভূত নিয়ে এই হৈ চৈ তার প্রমাণ। তাই এই রহস্যের সমাধানে রাষ্ট্রসঙ্ঘ থেকে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কেপলার ৪৫২বি তে গিয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে চূড়ান্ত রায়দানের জন্য।

চলতে চলতে একসময় আমাদের মহাকাশযান প্রবেশ করলো এক ওয়ার্ম হোলের মধ্যে। মহাকাশযানের ভিতরের একটি অংশে যেখানে বাইরের ছবি দেখা যাচ্ছিল সেখানে দেখলাম গতিপথের ভিতরটা প্রসারিত আর সংকুচিত হচ্ছে। আর যত এগোচ্ছি ততই সেই গতিপথটি আরও ছোট হয়ে যাচ্ছে। বেশ খানিকটা সময় পরে ওয়ার্ম হোল থেকে বেরিয়ে আবার আমাদের মহাকাশযান এগিয়ে চলল মহাকাশের মধ্য দিয়ে। এভাবে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ম হোল পেরিয়ে অবশেষে আমরা পৌঁছলাম কেপলার ৪৫২বি এর কক্ষে।

কেপলার ৪৫২বি এর এই অভিযান যে মোটেই সহজ হবে না, আসার পথে আমরা এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছি। রবার্ট আগে অভিযানে অংশ নেওয়ায় এই গ্রহের সম্বন্ধে অনেক কথা জেনেছি ওঁর কাছ থেকে। কেপলার ৪৫২বি পৃথিবীর থেকে ৫ গুণ ভারি হওয়ায় এই গ্রহের উপরিতলের অভিকর্ষের টান অনেক বেশি। তাই পৃথিবীর যে কোন অভিযাত্রীর এখানে নিজেকে দ্বিগুণ ভারি লাগবে এমনটাই আমাদের জানানো হয়েছিল। অনুভূতিটা কেমন হবে এই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা হাসি ঠাট্টা তামাশা করলেও ভিতরে ভিতরে একটা আশঙ্কাও ছিল আমরা মানিয়ে নিতে পারবো কি না এই ব্যাপারে। রবার্ট আমাদের আশ্বস্ত করেছিল এই বলে যে ব্যাপারটা সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হবে না।

কেপলার ৪৫২বি এর অক্ষ থেকে ঘন মেঘে ঢাকা গ্রহটির যে ছবি ভেসে উঠলো তা রবার্টের কাছে আগে শুনলেও একেবারে অজানা নতুন জিনিষ প্রত্যক্ষ করার মধ্যে যে অনাবিল আনন্দের সঙ্গে অজানা আশংকাও থাকে তা উপলব্ধি করলাম সেই সময়ই। চারিদিকে পাথুরে শিলা আর সক্রিয় আগ্নেয়গিরিতে ভরা গ্রহটি। প্রথম দর্শনে গা টা শিউরে উঠলেও কিছুক্ষণের মধ্যে ধাতস্ত হয়ে উঠলাম। মেঘের আবরণ ভেদ করে আগের অভিযানগুলিতে তৈরি করা এক স্পেস ষ্টেশনে নেমে পড়ার আগে দেখলাম গ্রহটি নদীর মত বড় বড় জলাশয় আর হ্রদে ভরা। চারিদিকে অবশ্য কোন সমুদ্র নজরে পড়ল না। এমনটা হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করায় জ্যোতির্পদার্থবিদ প্রফেসর নরডিন বললেন, “কেপলার ৪৫২ বি এর তারা কেপলার ৪৫২ এর বয়স ৬ বিলিয়ন বছর যেখানে সূর্যের বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বছর। সে কারণে অনুমান ছিল এই বহির্গ্রহটি হবে সমুদ্রে ভরা। কিন্তু বাস্তবে তা যে নয় তা জানা গিয়েছিল আগের অভিযানগুলি থেকে। আসলে কেপলার ৪৫২ সূর্যের চেয়ে ১০ শতাংশ বড় এবং এর উজ্জ্বলতা ২০ শতাংশ বেশি হওয়ায় কেপলার ৪৫২ বি তে তার নক্ষত্র থেকে পৌঁছানো তাপ পৃথিবীর থেকে অনেকাংশেই বেশি। এই তাপের প্রভাবে ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে এই বহির্গ্রহে থাকা সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে জমা হয়েছিল। এর পরে এই জলের অধিকাংশটাই কেপলার ৪৫২ থেকে আসা অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে ভেঙ্গে গিয়ে গ্যাসে পরিণত হয়ে কেপলার ৪৫২ বি এর প্রভাবের বাইরে মহাকাশে চলে যায়। সামান্য অবশিষ্টাংশ ঠান্ডা হয়ে যে জল বৃষ্টি করেছিল তাই সৃষ্টি করেছে এই সব জলাধারের।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের মহাকাশযান অবতরণ করলো কেপলার ৪৫২ বি তে ইতিমধ্যেই তৈরি করা মহাকাশ ষ্টেশনের কাছে।

পরের কয়েকদিন ব্যস্ত রইলাম যতটা সম্ভব চারিদিকে প্রাণের অনুসন্ধানে। বিশেষ কিছুই চোখে পড়ল না। বিভিন্ন নমুনা বিশ্লেষণ করেও কিছুই পাওয়া গেল না। অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ যুক্ত ড্রোন নামিয়ে কয়েকদিন সার্ভে করেও বিশেষ কিছুই পাওয়া গেল না। আমরা তখন ঠিক করলাম, রবার্ট যেখানে আগের দুই অভিযানে প্রাণের দেখা পেয়েছিল বলে দাবি করেছিল সেখানে পায়ে হেঁটে যাব।

পরেরদিন যখন বেরোলাম, আলোর তেজ বেশ তীব্র। আমরা আগ্নেয় শিলার জঙ্গলের মাঝে পথ করে খানিকটা এগোবার পরে আগ্নেয়শিলার একটি টিলার মাথায় রবার্ট একটি অবয়ব দেখে আমাদের সেটিকে কেপলার ৪৫২ বি এর প্রাণী বলে দাবি করলেন। প্রথমে আমাদেরও দৃষ্টিবিভ্রম হয়েছিল। মনে হয়েছিল হতেও পারে ওটি কোন প্রাণী। কিন্তু অনেক যুদ্ধ করে শিলাটির আরও কাছে যাবার পর ভ্রম কেটে গেল। আমরা বুঝতে পারলাম ওটি কোন প্রাণী নয়, টিলার উপরে থাকা শিলার একটি নকশা মাত্র। রবার্ট অবশ্য এ কথা মানতে রাজি নয়। তার মতে ওখানে কেপলার ৪৫২ বি এর প্রাণীই ছিল।

পরের দিন আমরা তখন প্রাতরাশে ব্যস্ত। খাওয়ায় বিরতি পড়ল রবার্টের চীৎকারে। আমাদের থাকার জায়গার কাছেই একটি হ্রদ ছিল। আগেই আমরা এই ধরণের জলাশয়গুলির জলের রাসায়নিক পদার্থের বিশ্লেষণ করেছিলাম। খনিজ পদার্থের ঘনত্ব এই জলে অনেক বেশি। হ্রদের পাশে থাকা একটি অদ্ভুত অবয়বের দিকে রবার্ট আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। ও ‘ইউরেকা, ইউরেকা’ বলে চেঁচিয়ে সেটিকে কেপলার ৪৫২ বি এর প্রাণী বলে চিহ্নিত করল। আমাদের অবশ্য তেমন কিছু মনে হল না। তবু রবার্টের দাবিকে আমরা যাচাই না করে ফেলতে পারলাম না। কালো মাটির উপর ছোট ছোট শিলায় ভরা চারিদিক। তার মধ্যে পথ করে আমরা পৌঁছলাম সেই অদ্ভুত অবয়বের কাছে। দেখলাম, অবয়বটি আসলে পড়ে থাকা শিলার এক নকশা। রবার্ট অবশ্য একথা মানতে রাজি ছিল না। তাঁর ধারণা ওখানে অবশ্যই কোন প্রাণী ছিল। এর পর প্রায় এক মাস ( কেপলার ৪৫২ বি এর সাপেক্ষে ) নানাভাবে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন প্রাণের সন্ধান পাওয়া গেল না। অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ যুক্ত ড্রোন ব্যবহার করেও কোন লাভ হল না। আগের দুই অভিযান এবং এবারের অভিযানে কেপলার ৪৫২ বি এর প্রাণীদের দেখা পাওয়া গেছে এই বিশ্বাস থেকে অবশ্য রবার্টকে টলানো গেল না।

সেদিন রাত্রে আমরা মহাকাশ স্টেশনে তখন আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ রবার্টের চীৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুমের ঘোরে রবার্ট কাঁপছে আর বলছে, “বাঁচাও, বাঁচাও ওরা আমাকে মারতে আসছে।”

আমরা অবশ্য তেমন কিছু দেখতে পেলাম না। রবার্টের এমন আচরণ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি প্রচুর। ওর এরকম অদ্ভুত বিশ্বাসের কারণ কিছু খুঁজে পাই নি। প্রফেসর ভ্যানকে আমরা দায়িত্ব দিলাম এর কারণ খুঁজতে। এর পরের তিন দিন আমরা ব্যস্ত রইলাম বিভিন্ন জায়গার মাটি এবং আগ্নেয়শিলার নমুনা বিশ্লেষণে। তিন দিনের দিন অবশ্য রবার্ট আমাদের সঙ্গে ছিল না। ভ্যানের দেওয়া কি একটা কাজে ব্যস্ত ছিল। চতুর্থ দিন প্রাতরাশের সময় ভ্যান রবার্টকে নিয়ে এল। রবার্টের হাতে একটি কাগজ। সেখানে অদ্ভুত সব প্রাণীর আঁকা ছবি। তার মধ্যে আমাদের আগে দেখা প্রাণীদের মত আগ্নেয় শিলার নকশা ছাড়াও আরও কয়েকটি অজানা প্রাণীর আঁকা ছবিও আছে। হ্যারি আমার কনে কানে বলল যে সে এই ছবি আগে কল্পবিজ্ঞানের বইয়ের চিত্রে দেখেছে। সে কথা ভ্যানকেও আমি বললাম প্রাতরাশের পর আলাদা জায়গায় ডেকে। ভ্যান বলল, “ আজ রাতের খাবারের পর আমার ঘরে এস, রবার্টের এই এলিয়েন দেখার দাবির পর্দাফাঁস করব।”

তখন কেপলার ৪৫২ বি তে সন্ধ্যা নামে নি। এর বায়ুমন্ডলে কেপলার ৪৫২ এর রৌদ্রের বিচ্ছুরণে গোধূলি লগ্নের যে বর্ণময় আলোকছটা এই বহির্গ্রহে ছড়িয়ে পড়েছিল তা এক কথায় অবর্ণনীয়। আমরা সেদিন একটু আগেই ফিরে এসেছিলাম। খানিকক্ষণ বাদে আমরা চারজন গিয়ে বসলাম গিয়ে সান্ধ্য ভোজনের টেবিলে। ভ্যান শুরু করল তাঁর কথা।

“ তাহলে, এ কদিনের অনুসন্ধানের পরে আমরা বলতে পারি, এখনও পর্যন্ত আমরা এই গ্রহে কোন এলিয়েনের খোঁজ পাই নি। এমন কি তার অস্তিত্বের কোন আভাসও পাই নি। আমার মনে হয়, আমাদের এই পর্যবেক্ষণ রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাবিশ্ব দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। ”

আমি এবং হ্যারি এ ব্যাপারে একমত হলেও রবার্ট বার বার ওর প্রাণীদের দেখার ব্যাপারটিতে জোর দিচ্ছিল।

ভ্যান বলল, “ ওর এই প্রাণীদের দেখার কারণ হল ‘প্যারেডোলিয়া’। একটি এলোমেলো বা অস্পষ্ট দৃষ্টিলব্ধ নকশাতে ( ভিস্যুয়াল প্যাটার্ন ) নির্দিষ্ট, প্রায়শই অর্থপূর্ণ চিত্র উপলব্ধি করার প্রবণতাই হল প্যারেডোলিয়া। কারও কারও ক্ষেত্রে এই প্রবণতা তীব্র হয়। অনেক সময়ই আমরা মেঘ, পাহাড়ের চূড়া এ সবের মধ্যে আকর্ষণীয় নকশা, চাঁদে মানুষ, পনির স্যান্ডউইচে ভার্জিন মেরির মুখ ইত্যাদি দেখতে পাই। মঙ্গল গ্রহে প্রথম অনুসন্ধানের সময়ও এরকমই নানা বস্তু এবং প্রাণীদের কথা বলে আসর মাতিয়েছিল একদল সাংবাদিক। পরে অবশ্য তেমন কিছুরই সন্ধান পাওয়া যায় নি।

আসলে মানুষের মনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বা অর্থপূর্ণ কিছু বোঝার প্রবণতা রয়েছে। প্যারেডোলিয়া আমাদের মস্তিষ্ক দ্রুত মুখ শনাক্ত করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। সেই থেকেই প্যারেডোলিয়ার উৎপত্তি। কেউ কেউ এই দেখাটাকে অন্ধ বিশ্বাসের পর্যায়ে নিয়ে গেলেই অনর্থের সৃষ্টি হয়। ”

কথাটা যে ভ্যান রবার্টকে উদ্দেশ্য করেই বলল তা বুঝতে পেরে ও রাগে গজ গজ করতে করতে সেখান থেকে চলে গেল। যাবার আগে জানিয়ে গেল যে ও এই রিপোর্টের সঙ্গে সহমত নয় এবং এটি কিছুতেই পেশ করতে দেবে না।

রবার্ট চলে যাবার পর পরের দিন ফেরার ধকল নিতে হবে জেনেও আমরা সেই রাত্রেই রিপোর্ট তৈরি করে কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন পদ্ধতিতে তা রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাবিশ্ব বিভাগে পাঠিয়ে দিলাম।

যাওয়ার সময় যাতে মহাকাশযানে রবার্ট কোন ঝামেলা করে বিপদ ডেকে না আনে তা নিশ্চিত করার জন্য অনেক বেশি সময়ের জন্য ওকে শীতঘুমে পাঠিয়ে দিতে হল। এতে আমাদের তিনজনের জেগে থাকার বেশি ধকল নিতে হবে জেনেও এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় ছিল না।

বুদ্ধি করে এই কঠিন কাজ করার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হয়েছিল।